শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:২২ অপরাহ্ন

গোয়ালন্দে মাচান পদ্ধতিতে পটোল চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা

গোয়ালন্দে মাচান পদ্ধতিতে পটোল চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা

রাজবাড়ী প্রতিনিধি: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে চরাঞ্চলের কৃষকরা পটোল চাষে মাচান পদ্ধতি ব্যবহার করে বর্ষা মৌসুমে বেশ লাভবান হচ্ছেন। বর্ষা মৌসুম ছাড়াও এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সারা বছরই তারা পটোলের ভাল ফলন পেয়ে থাকেন। সরজমিনে চাষিদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, সাধারণভাবে মাটিতে পটল চাষে বছরের শুষ্ক মৌশুমে মাত্র তিন থেকে চার মাস পটোল আবাদ করা যায়। কিন্তু মাচান পদ্ধতিতে সারা বছরই পটোল চাষ করা যায়। মাচায় পটোল চাষে সাধারন পদ্ধতির তুলনায় খরচ খুব কম, কিন্তু লাভ অনেক বেশি।

এ পদ্ধতিতে বছরের শুষ্ক মৌসুমে একবার জমিতে পটল রোপণ করে লতা গাছ মাচায় তুলে দিলে সারা বছর আর রোপণ করতে হয় না। সামান্য পরিচর্যা করলেই সারা বছর ভালো ফলন পাওয়া যায়। মাচায় পটোল চাষের সুবিধার কথা বলতে গিয়ে তারা জানান, সাধারণভাবে পটোলের বীজ রোপণের সময় জমিতে প্রচুর চাষ করতে হয়। লতাগাছ বড় হওয়ার জন্য মাটিতে খড়কুটা বিছিয়ে দিতে হয়। সার, কীটনাশক, আগাছা পরিষ্কার, সেচসহ নানা রকম খরচ করে মাত্র তিন থেকে চার মাস পটোলের ফলন পাওয়ার পর বর্ষা মৌসুমে গাছ মরে যায়। পরের বছর আবার নতুন করে রোপণ করতে হয়।

কিন্তু মাচান পদ্ধতির চাষে প্রতি বছর পটোলের বীজ রোপন করতে হয় না। একবার রোপন করলে তিন-চার বছর একইভাবে ওই পটোল ওই গাছে ফলন পাওয়া যায়। নীচু জমি হলে একটু উঁচু করে ছোট ছোট মাটির ডিবি তৈরি করে তার উপর পটোল গাছ রোপন করতে হয়। উঁচু জমি বা যে জমিতে পানি আটকে থাকে না এমন জমিতে ডিবি করা প্রয়োজন হয় না। রোপনের পর পটোলের লতাগাছ একটু বড় হলে জমিতে দু’-তিন ফুট উপরে মাচা তৈরি করে তার উপর পটল গাছ তুলে দিতে হয়।

একবার মাচান দেয়া হলে দীর্ঘদিন ওই মাচানই ব্যবহার করা যায়। ওই মাচান একটানা তিন-চার বছর পটোল আবাদের পর মাচান ভেঙ্গে ফেলতে হয়। এরপর জমি চাষ করে মাস খানেক ফেলে রাখতে হয়। এরপর একইভাবে মাচান করে ওই জমিতে পটোল চাষ করা যায়। মাচায় পটল চাষে জমিতে তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। আগাছা পরিষ্কারর বা নিড়ানিও দিতে হয় না। শুষ্ক মৌসুমে তুলনা মূলক সেচও কম লাগে, বেশি সার ও কিটনাশক ব্যবহার প্রয়াজন হয় না। তবে মাঝে মাঝে ভিটামিন জাতীয় ঔষধ স্প্রে করতে হয়। মাচায় বর্ষা মৌসুমে গাছ মরার ভয় নেই। গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়ন ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চরাঞ্চলের প্রান্তিক চাষি ২ নং বেপারী পাড়ার মৃত বিল্লাল শেখে ছেলে আঃ সামাদ ১৬শতাংশ, উত্তর দৌলতদিয়া ২নং বেপারী পাড়ার মৃত আতর আলীর ছেলে হায়াত আলী শেখ ৮ শতাংশ একই এলাকার মৃত শাজাহান বেপারীর ছেলে আশরাফ বেপারী ১৬ শতাংশ, মৃত রহমত ফকীরের ছেলে ইউছুফ ফকীর ১৬ শতাংশ জমিতে মাচান পদ্ধতিতে পটোল চাষ করেছেন

এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রান্তিক চাষিরা বর্ষা মৌসুমে মাচানে পটোল ঝিংগা, ধুন্দল সীম বরবটি করল্লা,উচ্ছেসহ নানা ধরনের সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছে। দৌলতদিয়া ২ নম্বর ব্যাপারী পাড়ার পটল চাষি আব্দুস সামাদ শেখ জানান, তিনি ১৬ শতাংশ জমিতে মাচান করে পটোল চাষ করছেন। এতে তার ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চার মাস যাবত তিনি প্রতিদিন ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকার পটল বিক্রি করেন। এভাবে প্রতি মাসে গড়ে তিনি ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার পটোল বিক্রি করে থাকেন।

একইভাবে ইউছুফ আলী ফকীর বলেন, মাত্র ১০ শতক জমিতে মাচা পদ্ধতিতে পটল চাষ করে প্রতিদিন তিনি ৯০০ থেকে ১০০০ টাকার পটল বিক্রি করছেন এ বিষয়ে গোয়ালন্দ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ খোকন উজ্জামান বলেন, আধুনিক কৃষি কাজে মাচান পদ্ধতিতে সবজি চাষ সারাদেশে এখন কমন পদ্ধতি। তারপরও এই অঞ্চলের কৃষকরা আগ্রহী হতে সময় লেগেছে। তবে সবদিক বিবেচনায় পটল চাষে সাধারণ পদ্ধতির চেয়ে মাচান পদ্ধতি সহজ ও বেশি লাভজনক হওয়ায় গোয়ালন্দে বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা এ পদ্ধতির পটল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |